ড্রাগন চাষে আসমার সাফল্য
চারদিকে সবুজে সমারোহ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য ড্রাগন ফল গাছ। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। কেউ ফল তুলছেন কেউবা পরিচর্যা করছেন। এমন এক দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে।
ঐ গ্রামে আসমা বেগম নামে এক নারী উদ্যোক্তা ড্রাগন ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। ইউটিউব চ্যানেল আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখে মূলত এ বাগান গড়ে তোলেন। কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়া দেশীয় পদ্ধতিতে এ বাগান গড়ে তিনি এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন।
এদিকে রোগবালাই কম হওয়ার পাশাপাশি চাষ পদ্ধতি সহজ এবং বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বিদেশি এই ফল চাষে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সেইসঙ্গে নিয়মিত তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
এরই মধ্যে স্থানীয় বাজারে ফল বিক্রি শুরু হয়েছে। এ পযর্ন্ত তিনি ৩ লাখ টাকার উপর ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন এ মৌসুমে ৬ লাখ টাকার উপর ফল বিক্রি হবে।
নারী উদ্যোক্তা আসমা বেগম জেলার বিজয়নগরের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী। তার ৩ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে। তার বাপের বাড়ি আখাউড়ার আদমপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি তার বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন।
আসমা বেগম জানান, ছোট বেলা থেকেই ফল ফলাদি চাষের প্রতি বেশ আগ্রহ রয়েছে তার। বিয়ে দেওয়ার পর কয়েক বছরের মাথায় তিনি তার স্বামীর বাড়ি বিজয়নগরে পরীক্ষামূলক লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ নানা জাতের ফল চাষ করেন। এতে ভালো ফলন পান তিনি। এরপর ইউটিউব ও ফেসবুকে ড্রাগন ফল চাষ দেখে তার আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
প্রথমে তিনি এক বিঘা জমিতে টেলিস পদ্ধতিতে ১০০ পিলারে ৫০০ চারা রোপণ করেন। রোপণের ১৭ মাসের মাথায় ফলন আসলে এতে ভালো সাফল্য পান। এরপর বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ করতে তার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পায়। তার বাবার বাড়ি উপজেলার আদমপুরে বিশাল জায়গা অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকায় এই জায়গা চাষের আওতায় আনতে শুরু করেন নানা পদ্ধতি। একপর্যায়ে ৬ বিঘা জমি চাষ যোগ্য করে গত প্রায় ২০ মাস আগে ৭০০ পিলারে ৬ হাজার ড্রাগন চারা লাগানো হয়।
বাগানে যে পরিমাণ ফল রয়েছে তিনি আশা করছেন আরো ৩ লাখ টাকার উপর বিক্রি হবে। এ বছর ৬ লাখ টাকা বিক্রি করা গেলেও সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর ১০-১২ লাখ টাকার উপর বিক্রি হবে। তাছাড়া তিনি মৌসুমি ফল লিচু, কাঁঠাল, পেপেসহ নানা ফল ফলাদি চাষ করছেন। আমি এ চাষের ফলনে খুবই খুশি। চাষের পরিধি বৃদ্ধিতে কাজ চলছে।
বাগান দেখতে আসা মনিয়ন্দ এলকার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে শুনে বাগান দেখতে আসা। এই ড্রাগন বাগানটি খুব সুন্দর ও পরিপাটি। এজন্য তিনিও ভাবছেন কিভাবে এটার আবাদ করা যায়।
কৃষি বিভাগ জানায়, চারা রোপণের এক বছরের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তেমন কোনো ক্ষতির আশংকা নেই। পরিচর্যা ছাড়া কোনো খরচও করতে হয় না। প্রায় সবধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। ড্রাগনের ফলের পিঁপড়া ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই। আবার পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ড্রাগনের ঠিকমতো পরিচর্যা করলে ১২-১৮ মাস বয়সের একটি গাছে ৫-২০টি ফল পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ড্রাগনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিন, ফসফরাস, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ রয়েছে। একটি ড্রাগন ফলে ৬০ ক্যালোরি পর্যন্ত শক্তি এবং প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, বিটাক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে ড্রাগন ফল খুবই কার্যকরী।
তিনি আরো বলেন, এই এলাকার মাটি এবং আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আমরা সবসময় চাষিদের ফলন ভালো রাখতে উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে থাকি। আসমার মতো নিজ উদ্যোগে এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। মাঠপর্যায়ে কৃষকদেরকে বিদেশি ফল চাষে আগ্রহী করে তুলতে পারলে একদিকে যেমন বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে অন্যদিকে ফল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন।
0 Response to "ড্রাগন চাষে আসমার সাফল্য"
Post a Comment